“প্যারাসিটামল” – এই বস্তুখানার নাম শোনেননি এমন মানুষ বোধ হয় পাওয়াই যাবেনা। একটু গা গরম ভাব থাকলেই আমরা চট করে প্যারাসিটামল খেয়ে ফেলি। আমাদের বাসা বাড়িয়ে আর কোন ওষুধ থাকুক না থাকুক প্যারাসিটামল থাকবেই। চলুন প্যারাসিটামল নামক এই নিত্যদিনের সঙ্গীটির জন্মকথা জেনে নেয়া যাক।
সময়টা ১৬৩৮ এর কাছাকাছি হবে। এক রাতে স্প্যানিশ রাজা লুইস জেরিম্যানু ফার্নান্দেজ ডি ক্যাপ্রিরিওর স্ত্রী এনা'র প্রচন্ড জ্বর আসলো। টারশিয়ারি (ম্যালেরিয়া) ফিভার। রাজার মনে শান্তি নেই, চোখে ঘুম নেই। প্রিয় রানী শয্যাশায়ী- কোন কিছুতেই যেন মন বসছে না! রাজ্যের সকল বৈদ্যদের ডেকে পাঠানো হলো। কেউ কোন সুরাহা করতে পারলো না। অগত্যা দূর দূরান্ত থেকে বৈদ্য - কবিরাজ ডেকে আনা হলো। সকলেই হতাশ করলেন রাজাকে। এদিকে রাণীর অবস্থা যায় যায়। কিছুতেই সুস্থ্য করা যাচ্ছে না রাণীকে। চিন্তায় রাজা দু'চোখের পাতা এক করতে পারছেন না। এভাবেই চলতে লাগলো আরো কিছুদিন।
বসন্তের কোন এক বিকেলে রাজা মশাই মুখ ভার করে বাগানে বসে ছিলেন। মৃদুমন্দ বাতাস আর মিষ্টি টিউলিপের গন্ধ ও যেনো রাজার মনকে প্রফুল্ল রাখতে পারছেনা। হঠাৎ প্রহরী রাজার কাছে একখানা রঙিন খামে মোড়ানো চিঠি নিয়ে আসলো। তৎকালীন লুক্সার গভর্নর রাজাকে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি রাণীকে Cinchona গাছের বাকল সেবন করানোর উপদেশ দিলেন। এই গাছটির বাকল জ্বর সারানোর কাজ করে বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন।প্রিয় পাঠক, এ ছিলো এক যুগান্তকারী চিঠি। যার রাজসাক্ষী এখন আমরা। প্রতিদিন শতশত রোগী প্যারাসিটামল সেবন করে সুস্থ হচ্ছেন। ওয়ার্ডে কিংবা চেম্বারে - আমরা হরহামেশাই এই ওষুধটি লিখে থাকি। যাইহোক, চিঠি পড়ে রাজার মনে স্বস্তি ফিরে এলো এবং অবশেষে রানী সুস্থ হলেন। সেই থেকেই Antipyratic হিসেবে Cinchona গাছটির ব্যবহার শুরু।
কিন্তু বিপত্তি বাধলো ১৮৮০ দশকের দিকে। বহুল ব্যবহারের দরুণ হারিয়ে যেতে বসলো এই মহান গাছ Cinchona। মানুষ হন্যে হয়ে বিকল্প পথ খুঁজতে লাগলো। ১৮৮৬ সালে Acetanilide এবং ১৮৮৭ সালে Phenacetin নামক দুটি Antipyratic আবিষ্কৃতও হলো। তবে মজার ব্যাপার হলো, ইতিমধ্যে স্যার হারমোন নর্থোপ মোরস p-Nitrophenol থেকে প্যারাসিটামল নামক একটি ড্রাগ বানিয়ে ফেললেন, যদিও ঐসময়ে তার এই উদ্ভাবনিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান মেনে নেয় নি। ১৮৯৯ সালে বের হয়ে আসলো আরো একটি মজার তথ্য। Acetanilide সেবনকারীর মূত্রে Metabolites হিসেবে ‘Paracetamol’ পাওয়া যায়।
১৯৪৬ সাল। নিউইয়র্কে “The Institute for the Study of Analgesic and Sedative Drugs” এর আয়োজনে কনফারেন্স ডাকা হলো। বিজ্ঞানী বার্নারড ও জুলিয়াসের উপর দায়িত্ব পড়লো কেন Non-Aspirin Agents গুলো পটেনশিয়ালি লিথাল এবং Methemoglobinemia ডেভেলপ করে তা খুঁজে বের করা। ১৯৪৮ সালে উনারা খুঁজে বের করলেন যে Acetanilide এর Antipyretic হিসেবে কাজ করার মূল নেপথ্যই হচ্ছে এর Metabolites “প্যারাসিটামল”। কাজেই Acetanilide ব্যবহার না করে শুধু প্যারাসিটামল ব্যবহার করলে কোন জটিলতা তৈরি হবে না। তখন থেকে Acetanilide এর বদলে প্যারাসিটামল এর ব্যবহার শুরু হয়৷ পরবর্তীকালে ১৯৫৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ও ১৯৫৬ সালে যুক্তরাজ্যে বানিজ্যিকভাবে এর প্রচলন শুরু হয়।
সেই থেকে প্যারাসিটামলের যাত্রা চলছে আজ অবধি।
রুদ্র মেহেরাব
সাহাবুদ্দীন মেডিকেল কলেজ
১৩ তম ব্যাচ